• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

উত্তম জীবনসঙ্গী কামনা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১০ মে ২০২৩

মোহাম্মদ রেজাউল মোস্তফা ইব্রাহিম, ফেনী সদর, ফেনী:
সবাই নিজের জীবনে উত্তম জীবনসঙ্গী চায়, কিন্তু তা কখনো নিজ ইচ্ছায় চাইলেই পাওয়া যায় না, দয়াময় মহান আল্লাহ তাআলা যদি চান তাহলেই পাওয়া যায়। তিনি যদি না চান, তাহলে তা কখনোই ঘটবে না। আবার, আল্লাহ তাআলা যদি চান তাহলে কেউই তা রুখতে পারবে না, যতোই প্রতিকূলতা থাক না কেন। আল্লাহ তাআলার পক্ষে আমাদের ধারণা থেকেও উত্তম কিছু দেওয়া কোনো ব্যাপার না। তিনি বান্দার প্রত্যাশার চেয়েও উত্তম কিছু দিতে সক্ষম। তাঁর ইচ্ছার বিপরীতে কেউ কিছু পেতে পারে না। তাই উত্তম জীবনসঙ্গী পেতে মহান আল্লাহর ওপর একান্ত আস্থা ও বিশ্বাসের বিকল্প নেই। যিনি দিতে পারবেন, তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে, শুধু তাঁর রহমতের জন্য নিজের জীবনকে প্রস্তুত করতে হবে, রবের আদেশ পালনে সর্বদা নিজের নফসকে (আত্মা) নিয়োজিত রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা চক্ষু শীতলকারী জীবনসঙ্গী পেতে দোয়া শিখিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তাআলার বিধান তো বটে। মূলত সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। বিয়ের মাধ্যমে মানুষের নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব দূর হয়। জীবনে সুখ-প্রশান্তি ও আনন্দের ধারা বয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালাম-কে সৃষ্টি করার পর হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম-কে তার জীবনসাথিরূপে সৃষ্টি করেন। তাদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান। কোন আমল করলে দ্রুত বিয়ে হয় কিংবা বিয়ের ব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ সহজ হয়, এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম অনেক আমলের কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে বিশেষ দুইটি কোরআনি আমলের কথা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী লাভের দোয়া
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহর নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালাম-এর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। সেখানে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম-এর একটি দোয়াও এসেছে। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর আশ্রয়ের পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গীনিরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই দোয়াটি হলো-


ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ


উচ্চারণ : রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।


অর্থ : হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা আল-কাসাস : ২৪)


আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরিচয়ে অনেক গুণাগুণের কথা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- তাঁরা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। কোরআনে বর্ণিত দোয়াটি শিখিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-


رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا


উচ্চারণ: রাব্বানা-হাবলানা-মিন আয্ওয়া-জ্বিনা- ওয়া যুররিইয়্যা-তিনা-কুররতা আ’ইয়ুনিঁও ওয়া জ‘আল্না-লিল মুত্তাকী-না ইমা-মা।
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সূরা ফোরকান : ৭৪)


প্রত্যেক নামাজের (তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল যে কোনো নামাজ হোক) শেষ বৈঠকে দোয়ায়ে মাছূরা পড়ার পর পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই আয়াতখানা বিয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আমল করলে আশা করা যায়, আল্লাহভক্ত দ্বীনদার, পরহেজগার ও আদর্শ স্ত্রী জুটবে। মহান আল্লাহ তাআলার মহত্বের কথা মাথায় রেখে দৃঢ় আশা নিয়ে উল্লেখিত দোয়াটির উপর নিয়মিত আমল করলে ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ সবাইকে তাদের চোখ জুড়ানো জীবনসঙ্গী ও সন্তান দান করবেন। যারা মহান আল্লাহর কাছে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের প্রত্যাশা করে, তাদের উচিত মহান আল্লাহর কাছে তারই শেখানো ভাষায় আবেদন করা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিমে বান্দাকে উত্তম স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান লাভের দোয়া শিখিয়েছেন। যেসব স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান একে অন্যের চোখকে শীতল করবে। আর যেহেতু দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাই আমাদের উচিত সর্বদা দোয়া করে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। যেমন, নেককার জীবনসঙ্গী পাওয়ার দোয়া, উত্তম স্বামী পাওয়ার দোয়া ইত্যাদি।

উত্তম জীবন সঙ্গী সবারই প্রত্যাশা। প্রত্যেক নারীই উত্তম স্বামী আর প্রত্যেক পুরুষই উত্তম স্ত্রীর আকাঙ্খা করে। এ প্রত্যাশা পুরণে আল্লাহর ওপর একান্ত আস্থা ও বিশ্বাসের বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা কোরআনে পাকে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের দোয়া শিখিয়েছেন। অনেক মানুষই জানতে চায় কিংবা দুঃশ্চিন্তায় থাকে যে, কিভাবে উত্তম স্বামী কিংবা স্ত্রী পাওয়া যায়। আবার প্রতিটি পুরুষই একজন উত্তম দ্বীনদার স্ত্রী পাওয়া স্বপ্ন দেখেন। তবে এটি নির্ভর করে ভাগ্যের ওপর। আল্লাহর কাছে চাইলে কি না পাওয়া যায়? আল কোরআনের ছোট্ট আয়াতটি পাঠ করলে দ্বীনদার স্ত্রী লাভ করা যায়। এই দোয়াটি অনেক ফজিলতপূর্ণ। বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীও জানতে চায় কীভাবে উত্তম সন্তান লাভ করা যায়। তাদের জন্যই উপরোক্ত কোরআনি আমল। যারা মহান আল্লাহর কাছে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের প্রত্যাশা করে, তাদের উচিত মহান আল্লাহর কাছে তাঁরই শেখানো ভাষায় আবেদন করা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিমে বান্দাকে উত্তম স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান লাভের দোয়া শিখিয়েছেন। যেসব স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান একে অন্যের চোখকে শীতল করবে। কোরআনুল কারিমের এ আয়াতের আমলে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক পুরুষকেই এমন উত্তম স্ত্রী ও সন্তান দান করবেন, যাদের দেখে পুরুষদের মন শান্ত হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যে সব নারী এ দোয়ার আমল করবে, আল্লাহ তাআলা সেসব স্ত্রীদেরকেও নয়নজুড়ানো স্বামী ও সন্তান দান করবেন। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত আল্লাহ তাআলার শেখানো ভাষায় তাঁরই কাছে উত্তম জীবনসঙ্গী ও সুসন্তান লাভের দোয়া করা। আর যারা বিয়ে করেছেন তারা স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বীনদার করার জন্য, তাদের আদর্শবান করে গড়ে তোলার জন্য- প্রতিবার দোয়ায় এ আয়াত পাঠ করলে বিশেষ উপকার লাভ হয়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং উপরোক্ত আলোচনার প্রতি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads